মৃত্যুক্ষুধা কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী উপন্যাস। ১৯২৭-১৯৩০- এসময়ের মধ্যে উপন্যাসটি রচিত এবং সওগাত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে মুদ্রিত হয় (অগ্রহায়ণ ১৩৩৪-১৩৩৬ ফাল্গুন)। উপন্যাসের কাহিনী মূলত, চাঁদসড়ক ও কৃষ্ণনগরের পটভূমিতে রচিত। কাহিনী রচিত কিছু মুসলিম ও কিছু খ্রিষ্টান নর-নারী নিয়ে। প্যাকেলে এ গল্পের উল্ল্যেখযোগ্য চরিত্র।একান্নবর্তী অথচ পিতৃহীন সংসারের একমাত্র উপার্জনশীল অভিভাবক সে। বৃদ্ধ মা এবং তিনটি বিধবা ভাই বৌ ও স্বামী পরিত্যাক্ত এক বোন ও তিন ভাইয়ের সন্তান প্রায় ডজন খানেক। তাদের সকলের ভরণ পোষন নিজে (প্যাকেলে) কেই করতে হয়।মেজ ভাই এর বৌ যে, ‘মেজ বৌ’নামে উপন্যাসে পরিচিত তার সাথে প্যাকেলের মা প্যাকেল এর বিয়ে ঠিক করেন। কিন্তু মেজ বৌ সুন্দরী হলেও তাকে সে বিয়ে করতে রাজি নয়। কেন না সে ‘ওমান কাতলি’ মধু ঘরামীর লাবন্যময়ী কুর্শিকে ভালোবাসে।কিন্তু মেজ বৌ প্যাকেল কে ভালবাসে। খ্রিষ্টান মেয়ে কুর্শি।উপন্যাসের দ্বিতীয় ধাপে আছে নায়ক চরিত্র আনসার।বিত্তশালী মুসলিম পরিবারের ছেলে। সে মূলত বিপ্লবী কর্মী। মেহনতী মানুষকে শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ আন্দোলনে সচেতন এবং সক্রিয় করে গড়ে তুলাই তার লক্ষ। তার জন্য সে বদ্ধপরিকর। কৃষ্ণনগর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কন্যা রুবি কে সে ভালবাসে। রুবিও তাকে ভালবাসে। কিন্তু রুবির বাবা তা মেনে নিতে চায় না। আনসার কংগ্রেস কর্মী হয়ে একবার জেলে যায়। সে বুঝতে পারে শ্রমিক দের শক্তি উদ্বোধন ছাড়া দেশ কে স্বাধীন করা দুঃসাধ্য। আর তাই সে কৃষ্ণনগরে শ্রমিক সংঘ গড়ে তুলতে চায়।উপন্যাসের মূল উপকরন হচ্ছে দরিদ্র আর ক্ষুধা। আর ক্ষুধার তাড়নায় মৃত্যু। ক্ষুধার তাড়নায় মানুষ যে কি থেকে কি হয় তার চিত্র তুলে ধরেছেন। দরিদ্র এর করাল গ্রাস কিভাবে কৃষ্ণ নগরের মানুষের মাঝে ঢেউ তুলে তার বর্ননাই লেখক করেছেন। এছাড়া ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি , সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি, দূর্নীতি এগুলোর চিত্র ও এসেছে। ধর্মের নামে যে শোষন ও বঞ্চনা তারও চিত্র আছে। এ উপন্যাসে ক্ষুধা ও মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে গজালের মা (প্যাকেলের মা)। তিনটি ছেলে অকালে মারা যায়, আর রেখে যায় বৌ-বাচ্চা, মেয়েটি ও শ্বশুর এর বাড়ি থেকে চলে আসে। তারও বাচ্চা আছে। দরিদ্রের চরম রূপ সে দেখেছে। শেষ পর্যন্ত কংকালসার। “মৃত্যুক্ষুধা” গজালের মা’রই ইতিবৃত্ত।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস